সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষের চাঁদাবাজির কারণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। প্রতি বছর প্রায় ৭০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে প্রতিটি পাথরের ট্রাকে পানামাকে চার্জ দিতে হতো ৭-৮শ’ টাকা। ২০১৯ সাল থেকে পানামা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি পাথরের ট্রাকে অনৈতিকভাবে ৭-৮ হাজার টাকা নেয়া শুরু করে। অন্য পণ্যবাহী প্রতিটি ট্রাক থেকে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
গত রোববার দুপুরে সোনাসজিদ আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে সোনামসজিদ জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকদের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ২৮০-৩০০ পাথরবাহী ট্রাক ও অন্য পণ্যবাহী ট্রাক আসে প্রায় ১০০টি। ২০১৯ সাল থেকে এমন অনৈতিক কারবার চলছে। সোনামসজিদ শুল্ক স্টেশন সূত্রমতে, এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, ভুসি, চিঁড়া, কিছু মেশিনারিজ, পোল্ট্র্রি ফিড, ফ্লাইঅ্যাশ ও পিয়াজ আমদানি হয়।
মৌসুমি ফল যেমন কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফল আমদানি হয়। নেট মশারি, পাটের ব্যাগ, পাটের দড়ি, রাইস ব্রান অয়েল ও কিছু গার্মেন্ট পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। তবে এ বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের ৬০ শতাংশই পাথর। ফলে পাথর থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সোনামসজিদ আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর সোনামসজিদ। রাজস্ব আদায়ের দিক থেকেও স্থলবন্দরটি দ্বিতীয় স্থানে। এ বন্দরটি উদ্বোধনের পর ২০০৬ সালে থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত মোতাবেক কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী আট বছরের মধ্যে বন্দরের অভ্যন্তরে সকল অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এই স্থলবন্দরে পূর্ণসক্ষমতার জন্য লজিস্টিক সাপোর্টের (ফোর্ক লিফ্ট, ক্রেন, রেকার, হেভিওয়েট স্কেল ইত্যাদি) ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে পোর্টের স্বাভাবিক আমদানি কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন আমদানীকারকরা ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেইসঙ্গে রাজস্ব আদায় ও লক্ষমাত্রা অর্জন হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানটি বন্দর মাশুল এবং লেবার হ্যান্ডেলিং চার্জ আদায়ের নামে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। এর পরিমাণ দিন দিন বিভিন্ন আঙ্গিকে নানা উপায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট করছে। মো. মামুনুর রশীদ বলেন, আমদানিকৃত পণ্যে যাবতীয় বিলের ওপর যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট সরকারকে দিয়ে থাকে, তার কোনো রকম মূসক চালান পানামা পোর্ট অপারেটর আমদানিকারকদের প্রদান করে না। পাথর ছাড়া অন্যান্য পণ্যে পানামা অভ্যন্তরে ট্রাক থেকে ট্রাকে লোড-আনলোড এক বার নেয়ার কথা থাকলেও দুই বার বিল নেয়া হয়। বিলের কপিতে প্রতিটি চার্জ নির্ধারিত স্থানে উল্লেখ করে না। পাথরের গাড়িতে কোনো সেবা প্রদান না করেই সুকৌশলে কিছু দপ্তরকে ম্যানেজ করে প্রতি গাড়িতে মাশুল এবং লেবার হ্যান্ডেলিং চার্জের নামে ৭-৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যা দুর্নীতির শামিল। লেবার হ্যান্ডিলিং চার্জের ওপর ১৫% সরকারি ভ্যাট আদায়ের নামে পানামা পোর্ট অপারেটর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ বা দূর্নীতি করেছে।
পানামা পোর্ট অপারেটর কর্তৃক সকল মাসুল/চার্জ আদায়ের পরেও সরকারি কোষাগারে পৌঁছে কিনা এ বিষয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে, এটি তদন্ত করা প্রয়োজন। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসবের সমাধান না হলে ব্যবসায়িক স্বার্থে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান আমদানি-রপ্তানিকারক মামুনুর রশীদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনামসজিদ পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ম্যানেজার মো. মাইনুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা এ বন্দরের অপারেটর। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সবকিছু পরিচালত হয়। সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী বন্দর মাশুল আদায় করা হয়। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে নগদ টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে বন্দর মাশুল আদায় হয় সন্ধ্যার পর। তাছাড়া এ বন্দরে কোনো বুথ নেই।